দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা

blogspot 0 comments


দাঁতের প্রদাহ : দাঁত মানুষের অমূল্য সম্পদ। দাঁতের সাহায্যে মানুষ খাদ্যবস্তু চর্বন করে থাকে। চর্বন ক্রিয়ার সময় মুখ হতে লালা রস বের হয়ে খাদ্যদ্রব্যের সাথে মিশে পরিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে। দাঁত সৌন্দর্যের অঙ্গ/দন্তহীন ব্যক্তিরা স্পষ্ট কথা বলতে পারে না এবং তাদের মুখের শ্রী নষ্ট হয়ে যায়। হজম কাজের সাহায্যের জন্য খাদ্যবস্তুকে টুকরা টুকরা করে গলধঃকরণ করাই দাঁতের কাজ।
দাঁতের গঠনজনিত ত্রুটি, দাঁতের অযত্ন, আঘাত দাঁতের পোকা, বেশি গরম, শীতল খাদ্য, মিষ্টি ও টক খাদ্য গ্রহণ এবং অপরিষ্কারজনিত জীবাণু দূষণে দাঁতের গোড়া ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়।
লক্ষণ ১ : দাঁতের ক্ষয় বা আঘাতপ্রাপ্ত অংশ ভাঙ্গা দেখা যাবে। দাঁতের গোড়া ফুলে লাল হয়ে যায়। মনে হয় দাঁতের গোড়ার মাংস বৃদ্ধি হয়েছে।  তীব্র ব্যথা হয়/ব্যথা সেই পার্শ্বের মাথা ও কানের চিপে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যথার তীব্রতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।  উষ্ণ গরম পানিতে কুলকুচা করলে ব্যথা বাড়ে।  দাঁতে টোকা লাগালে রক্তপাত হতে পারে।
দন্তক্ষয় রোগ/পোকা খাওয়া : আহারের পর খাদ্যদ্রব্যের কিছু দাঁতের ফাঁকে অথবা আশেপাশে লেগে থাকতে পারে। সেখানে ব্যাকটেরিয়া নামক এক জাতীয় জীবাণু অম্লের উৎপত্তি করে। এ অম্ল দাঁতে সামান্য গর্তের সৃষ্টি করে। প্রতিষেধক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এ গর্ত দিনে দিনে বড় হতে থাকে। এ পর্যায়ে আক্রান্ত দাঁতের খারাপ অংশটুকু দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফেলে দিয়ে সুষ্ঠুভাবে গর্ত পূরণ করে দিতে হবে।
লক্ষণ ২ : প্রথমে গরম, ঠান্ডা ও মিষ্টি অথবা টক (অম্ল) জাতীয় খাদ্য খেলে দাঁতে শিরশির করে এবং ব্যথা অনুভূত হয়।  পরে এটা সার্বক্ষণিক ব্যথায় পরিণত হয় এবং অসহনীয় হয়ে উঠে।  ক্ষয়প্রাপ্ত দাঁতের চিকিৎসা না করা হলে দাঁতটি সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যায় এবং এর নিচে ক্ষতের সৃষ্টি হতে থাকে।
ক্ষতের লক্ষণ :  দাঁত মৃদু নাড়ায় ব্যথা অনুভূত হয়।  দাঁতের গোড়া ফুলে যায়।  সম্পূর্ণ মুখমন্ডল ফুলে যেতে পারে।
এক্ষেত্রে করনীয় : ১. দাঁতের সৃষ্ট গর্তকে দন্ত চিকিৎসকের সাহায্যে পিলিং করে নিতে হয়। ২. ক্ষয়প্রাপ্ত দাঁতটি নষ্ট হয়ে গেলে তুলে ফেলাই উত্তম।
দাঁতের গোড়ায় প্রদাহ/পায়োরিয়া : দাঁত ও মাড়িতে খাদ্যদ্রব্য জমা হওয়ায় এবং উত্তমরূপে পরিষ্কার না করার কারণে সেখানে জীবাণু জন্মে। দাঁতের গোড়ার উপরের পেরিঅস্টিয়াম মেমব্রেনের সংযোগস্থল নষ্ট করে। ঐ স্থানে জীবাণু জন্মে পচনশিল দুর্গন্ধযুক্ত দন্তরোগের সৃষ্টি করে। এভাবে দাঁতের গোড়া ফুলে উঠে এবং কখনও কখনও পুঁজ দেখা যায়। যে সকল মানুষ পরিমিত খাদ্য খেতে পায় না তাদের মধ্যে এ রোগ প্রায়ই দেখা যায়।
লক্ষণ ৩ : এক বা একাধিক মাড়ির সংযোগস্থলে ক্ষত হয়ে থাকে।  দাঁতের গোড়া ফুলে এবং লালচে হয়।  কখনও জ্বালা করে এবং রোগী আহারে অনিচ্ছা  প্রকাশ করে।  ফুলাস্থানে একটু আঘাত লাগলে অথবা জোরে চোষণ দিলে রক্ত ঝরে।  অনেক সময় তীব্র ব্যথা হয় এবং দাঁত নড়বড়ে হয়।  মুখে বিশ্রী দুর্গন্ধ হয় এবং কথা বলতে অস্বস্তিবোধ করে।  ক্ষতের উপর সাদা আবরণ পড়ে।  মুখে ঠান্ডা পানি দিলে শির শির করে।
এক্ষেত্রে করনীয় : ১. দাঁতের ভিতরের কড়ালীসমূহ এর গোড়ায় সৃষ্ট শক্ত পাথর দূর করতে হয়। নড়বড়ে দাঁত তুলে ফেলতে হবে। ২. প্রতিদিন মুখ পরিষ্কার রাখতে হয় এবং দাঁতের মাড়িতে আঙ্গুল দিয়ে ঘর্ষণ করে ম্যাসেজ করতে হয়। তবে গ্লিসারিন টেনিক এসিড ৩৩% দ্বারা ম্যাসেজ করলে ভাল হয় এবং দ্রুত রোগ নিরাময় হয়। ৩. লবণ পানির উষ্ণ স্যালাইন দিয়ে ৩/৪ বার কুলকুচা করলে বা অন্তত বিছানায় যাবার প্রাক্কালে এবং সকালে ঘুম হতে উঠে করলে এ রোগের বিস্তারের সম্ভাবনা কম।
মাড়িতে ফোঁড়া : আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ এবং ব্যস্ততার বা অলসতার কারণে দাঁত ও মুখ খুব ভালভাবে পরিষ্কার রাখা হয়ে উঠে না। ফলে অনেকেরই মাড়িতে জ্বালা ও রক্তপাত হয়। দীর্ঘদিন এভাবে অবহেলায় সাধারণ রোগও খারাপের দিকে যায় এবং স্নায়ুতন্ত্র নষ্ট হয়। দাঁত নড়বড় করে। দাঁতের একধার ফেটে যায় এমনকি পোকা ধরার মত দেখা যায়। মানুষের মুখে বিভিন্ন রকম জীবাণু থাকে। এ সকল জীবাণু সাধারণত বা প্রতি সময় দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা পচা খাদ্যের সাহায্যে দ্রুত জীবাণু বিস্তার করে। এ সকল জীবাণুগুলোকে ডেন্টাল প্লাক বা শর্করা বা ব্যাকটেরিয়াল প্লাক বলে। প্রলেপে অবস্থিত জীবাণুগুলো অম্ল (এসিড) তৈরি করতে সক্ষম। দাঁতে লেগে থাকা খাদ্য শর্করা বা চিনির সাহায্যে স্থানীয় এসিড তৈরি করে। ধীরে ধীরে এ এসিডে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয় এবং একইভাবে জীবাণু দাঁতের একেবারে নিচে হাড়ের মধ্যে এসে পুঁজের সৃষ্টি করে।
লক্ষণ ৪ : আক্রান্ত দাঁতে প্রচন্ড ব্যথা হয় এবং চোয়াল ও মুখ ফুলে যায়।  আক্রান্ত দাঁতের ফুলা অংশ স্পর্শ করলে বেশ তাপ দেখা যায়।  আক্রান্ত অংশে গোটা মাথা, চিপ ব্যথায় চিলিক পাড়ে। ব্যথার তাড়নায় ১০৪F পর্যন্ত জ্বর আসে। এক সময় মাড়ি বা নিচের চোয়ালে গালের চামড়া ফেটে পুঁজ বের হয়ে আসে। জ্বালা যন্ত্রণা কমে গেলেও জটিলতা সৃষ্টি হয়।
এক্ষেত্রে করনীয় : ১. উত্তমরূপে পুঁজ পরিস্কার করে ড্রেনেজ দিতে হয় এবং প্রতিদিনই ড্রেসিং করতে হয়।
দাঁতের মাড়ি ফোলা এবং জিঞ্জিভাইটিস : সাধারণত অপরিষ্কার মুখেই এ রোগ দেখা যায়। যে সকল মানুষ পরিমিত খাদ্য খেতে পারে না তাদের মধ্যেই এ রোগ বেশি দেখা যায়।
লক্ষণ ৫ : এক বা একাধিক মাড়ির সংযোগস্থলে ক্ষত হতে থাকে।  মুখ জ্বালা করে ও খাবার গ্রহণে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। ক্ষতের উপর সাদা আবরণ পড়তে পারে। সহজে রক্ত বের হতে পারে এবং রোগীর মুখে দুর্গন্ধ হয়। মুখে লালা বাড়ে এবং রোগী অস্বস্থিবোধ করে।
দাঁত পরিষ্কার রাখার স্বাস্থ্যসম্মত নিয়ম : দাঁত ও মাড়িতে খাদ্যদ্রব্য জমা হওয়ার কারণেই দাঁতের ক্ষয় এবং মাড়ির রোগ হয়ে থাকে। এ রোগ আক্রান্ত ব্যক্তিদের দাঁত পরিষ্কার নিয়ম সম্বন্ধে উপদেশ দিতে হবে। যাতে তারা ভবিষ্যতে অসুবিধার সম্মুখীন না হয়। দাঁত ও মাড়ির সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখলে মাড়ি ফোলা রোগ হতে রেহাই পাওয়া যেতে পারে। দন্ত রোগাক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়াও সকলকে নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখার উপদেশ দিতে হবে। কারণ প্রতিরোধ আরোগ্য হতে শ্রেয়।' ব্রাশ ও দাঁতন : দাঁত পরিষ্কার করার জন্য টুথ ব্রাশ এবং টুথপেস্ট ভাল। যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় তবে দাঁতনও একটি উৎকৃষ্ট জিনিস। টুথপেষ্টের পরিবর্তে ব্রাশ বা দাঁতনে লবণ ব্যবহার করা যায়। প্রাতরাশের পর এবং রাতে নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে দাঁত মাজা ভাল। দুপুরে আহারের পরও একবার দাঁত মাজা ভাল।
দাঁত মাজার প্রণালী : সব সময় ভিতর বা বাইরের মাড়ির উপর হতে দাঁত মাজা শুরু করতে হয়। যাতে প্রত্যেকটি দাঁত কমপক্ষে ১০ বার ঘষা হয়। এরপর পানি দ্বারা কমপক্ষে ৩ বার ভালভাবে কুলকুচা করতে হবে যাতে সমস্ত ময়লা বের হয়ে পড়ে।


পায়ে ও গিঁটে ব্যথা হলে কি বাতজ্বর ?

Google+ Pinterest

0 Response to " দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা "

  • Commented politely and wisely in accordance with the content.
  • Comments are not needed by other readers [spam] will be removed immediately.
  • If the article entitled " দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা " is useful, share to social networks.
Code Conversion