ডা:
সুলতানা জাহান
তারিখ:
২৫ নভেম্বর, ২০১২
নবদম্পতি
বা নতুন বিয়ে হওয়া স্বামী-স্ত্রীদের কী ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিলে ভালো হবে তা নির্ভর করে কত বছর বয়সে তাদের বিবাহিত জীবন শুরু হলো এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা কেমন তার ওপর। যদি স্বামী বা স্ত্রীর বয়স আঠারো বছরের কম হয়, তাহলে বিয়ের পর অন্তত দুই বছরের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত। কারণ, একজন অল্পবয়সী মেয়ের জন্য গর্ভধারণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার, এমনকি এতে প্রাণনাশেরও আশঙ্কা থাকে।নবদম্পতিদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণের বেশ কয়েকটি আদর্শ পদ্ধতি রয়েছে; সেগুলো হলো :
(১) স্বামী নিজে বেরিয়ার মেথড বা কনডম ব্যবহার করতে পারেন। একটি টেম্পোরারি পদ্ধতি এবং এর বহুবিধ সুবিধা রয়েছে। বিয়ের পরপর পরিকল্পিতভাবে যৌনমিলন অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। এ সময় ইমোশনেরই প্রাধান্য থাকে। তাই সবদিক বিবেচনায় টেম্পোরারি পদ্ধতিই এ সময় সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা।
(২) নবদম্পতিদের জন্মনিরোধক হিসেবে সবচেয়ে ফলপ্রসূ হচ্ছে ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল বা খাবার বড়ি। এ ওরাল পিল নিয়মমাফিক স্ত্রী খাবে। প্রতি মাসে বা মাসিক ঋতুস্রাবের প্রথম বা পঞ্চম দিন বড়ি খেতে শুরু করতে হয়। প্রতিদিন রাতে খাবারের পর বড়ি খেলে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে কিংবা ভুলে গেলেও পরদিন সকালে খেয়ে নেয়া যায়।
তবে খাবার বড়ি খেতে শুরু করার পর অনেকেরই প্রথম প্রথম কিছু অসুবিধা দেখা দিতে পারে। যেমনÑ বমিভাব, মাথা ঘোরানো ইত্যাদি। এসব অসুবিধা খুবই সাময়িক এবং অল্পদিন পর কোনো চিকিৎসা ছাড়াই কেটে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
(৩) আইইউসিডি (ইন্ট্রা-ইউটেরাইন কন্ট্রাসেপটিভ ডিভাইস) : এটি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত জন্মনিরোধক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে খাবার বড়ি যেখানে গ্রহণযোগ্য নয়; যেমন, ডায়াবেটিস থাকা, এজমা বা হাঁপানি থাকা কিংবা হাইপারটেনশন বা উচ্চরক্তচাপ থাকা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সিটি বা কপার-টি সবচেয়ে ভালো। কপার-টি যেকোনো পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে নেয়া যায় এবং যখন ইচ্ছা আবার খুলে ফেলা যায়। এটি একটি সহজ ও নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি এবং তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই।
(৪) ছন্দ পদ্ধতি বা সেফ পিরিয়ড পদ্ধতি : যদি নববিবাহিত স্ত্রীর মাসিক ঋতুস্রাব নিয়মিত থাকে তবে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়, কারণ এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা জটিলতা নেই। মাসিক ঋতুস্রাবের প্রথম দশ দিন এবং শেষ দশ দিন মোটামুটিভাবে নিরাপদ এবং উপরিউক্ত সময়ে মিলিত হলে গর্ভসঞ্চারের সম্ভাবনা কম থাকে।
(৫) জন্মনিরোধক ফোম বা জেলি : জেলি বা ফোম যৌনমিলনের অন্তত পাঁচ মিনিট আগে ব্যবহার করা উচিত। এ পদ্ধতির বিশেষ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে এর ফেইলিউর রেট বেশি। কাজেই শুধু এ পদ্ধতির ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। এ পদ্ধতি সবচেয়ে ফলপ্রসূ হয়, যদি একই সাথে স্বামী কনডম এবং স্ত্রী ফোম ব্যবহার করেন।
জন্মনিরোধকের সুবিধা-অসুবিধা
জন্মনিরোধকের যেমন অনেক সুবিধা রয়েছে, তেমনি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। তবে সাধারণভাবে একটি নবদম্পত্তি চান বিয়ের পর অন্তত কিছুটা সময় ঝামেলাহীন মুক্ত জীবনযাপন করতে। তা ছাড়া অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা গুছিয়ে ওঠার জন্যও অনেকে কিছুটা বিলম্বে সন্তান নিতে চান। তাদের জন্য একটি অস্থায়ী পদ্ধতি অনেক প্রয়োজনীয়। তা না হলে অথবা অনাহূতভাবে সন্তান এসে গেলে অনেককেই অত্যন্ত বিড়ম্বনাপূর্ণ গর্ভপাতের পথ বেছে নিতে হয়।
স্বামীর পক্ষে জন্মনিরোধক তথা কনডম ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। কারণ এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু ইমোশনের সময় দেখা যায় প্রায়ই কনডম সঠিক নিয়মে ব্যবহার হয় না। ফলে এর ফেইলিউর রেট বেশি। তাই স্ত্রীর যদি কোনো পদ্ধতি মানানসই বা উপযোগী মনে না হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শসাপেক্ষে ভিন্ন কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে।
লেখিকা : অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান, গাইনি অবস, বিএসএমএমইউ
0 Response to " নবদম্পতিদের জন্মনিয়ন্ত্রণ "