গর্ভাবস্থায় নারীর সুস্থতা ও সঠিক পরিচর্যা

blogspot 0 comments





গর্ভাবস্থায় নারীর সুস্থতা সঠিক পরিচর্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের সুস্থতার উপরেই নির্ভর করে সন্তানের সঠিক বৃদ্ধি বিকাশ। প্রায় প্রত্যেক গর্ভবতী মা'কে গর্ভাবস্থায় ১০ কেজি পর্যন্ত ওজন বৃদ্ধি করতে হয় একটি কেজি ওজনের সুস্থ সন্তান জন্মদান করার জন্য।তবে লক্ষ রাখতে হবে প্রত্যেক মাসে যেন কেজির বেশি ওজন বৃদ্ধি না পায়। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেলে শরীর আগের অবস্থায়
ফেরত আনতে অনেক কষ্ট করতে হবে। সেই সাথে গর্ভাবস্থায় বা সন্তান জন্মদানের সময়েও অনেক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে

গর্ভাবস্থায় সন্তানের সুস্থতার জন্য গর্ভবতী মা কে উপযুক্ত খাবার খেতে হয়। তবে খাদ্য প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বা কম হলে, মোট কথা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলে তা অনেক বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় গর্ভস্থ সন্তানের জন্য। আসুন জেনে নেই গর্ভাবস্থায় মায়েদের খাবারের তালিকা কেমন হওয়া উচিত

সকালেঃ 
গর্ভবতী নারীদের সকালে উঠতে কিছুটা বেগ পেতে হয় কারণ বেশিরভাগ মায়েদেরই রাতে ঠিক মত ঘুম হয়না। তবে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকলে গর্ভের বাচ্চার উপরে এর প্রভাব পড়ে। আবার অনেক সময় সকালে উঠার পরে বমিভাব হয়, খেতে ইচ্ছা হয়না। সেক্ষেত্রে সকালেই ভারি খাবার না খেয়ে হালকা চা খাওয়া যেতে পারে। সাথে একটা বিস্কিট

প্রাতরাশঃ
চা খাওয়ার বেশ খানিকটা পরে খেতে পারেন ২টি রুটি অথবা মাখন লাগিয়ে খেতে পারেন স্লাইস পাউরুটি। সাথে থাকতে পারে সবজি তরকারি। এবং একটি ডিম। ডিম সিদ্ধ করে খেতে পারেন অথবা পোঁচ করেও খাওয়া যাবে। তবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে পাউরুটি না খাওয়াটাই ভাল হবে। দশটা এগারটার দিকে এক গ্লাস দুধ খেতে পারেন। কখনো কখনো ফলমূলও খেতে পারেন

দুপুরের খাবারঃ
দুপুরে ভাত খাবেন এক বাটি। তবে ভাত খেতে না চাইলে রুটি খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে রুটি খাবেন টি। সাথে মাছ বা মাংস অবশ্যই খাবেন। পরিমানটা হবে পঞ্চাশ থেকে সত্তর গ্রাম। সেই সাথে খেতে হবে বিভিন্ন রকম তরকারি, ডাল, তাজা ফল সবজির সালাদ। খাবার পরে খেতে পারেন দই

বিকালেঃ
বিকালে হালকা কিছু দিয়ে নাস্তা করতে পারেন ভারি খাবার না খেয়ে। একটু চা বা দুধ খেতে পারেন। সাথে হয়ত দুই তিনটি বিস্কিট। অথবা খেতে পারেন কোন মজাদার ফল। কোন দিন এক স্লাইস কেক বা বাসায় তৈরি হালকা পাতলা স্নাক্সও খেতে পারেন। তবে বেশি তেলের জিনিষ ভাজা পোড়া না খাওয়াই ভাল হবে

রাতের খাবারঃ
রাতের খাবার হবে দুপুরের মতই। তবে শাক জাতীয় জিনিষ রাতে খাওয়া পরিহার করলে ভাল হবে। বিভিন্ন সবজির আইটেম থাকতে পারে বেশি করে

রাতে শোয়ার আগেঃ 
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস দুধ অবশ্যই খেতে ভুলবেন না। সারারাত যেহেতু আপনি অভুক্ত থাকবেন তখন এই দুধটুকুই কিন্তু রাতে আপনার গর্ভস্থ সন্তানকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করবে

এছাড়াও পানি খেতে হবে প্রচুর। পানি খাবার জন্য কোন নিয়ম নেই। একটু পরপর গর্ভবতী নারী তার চাহিদা অনুযায়ী পানি খেতে পারবেন



এই তালিকা যে কোন সাধারন গর্ভবতী নারী মেনে চলতে পারেন। গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি একটি প্রতিদিনের সাধারন খাদ্য তালিকা। তবে অনেকেরই অনেক খাদ্য উপাদানে সমস্যা থাকতে পারে। কোন কোন গর্ভবতী নারী ডাইবেটিকস, উচ্চ প্রেশার ইত্যাদি শারীরিক সমস্যায়ও ভুগতে পারেন। তাদের খাবারের তালিকা হতে হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের। ডাইবেটিকস এর শিকার হলে শর্করা জাতীয় মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিত্যাগ করতে হবে, আবার প্রেশারের রুগিরা লবন কম খাবেন। তাই গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে তার দেয়া তালিকা অনুযায়ী খাবার গ্রহন করতে হবে। শুধুমাত্র একজন গর্ভবতী নারীই পারে তার গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহন করে গর্ভের সন্তানের সুস্থতা নিশ্চিত করতে। 
গর্ভাবস্থা পরীক্ষা-
* নিয়মিত তারিখে মাসিক না হবার আরও সপ্তাহ পর প্রস্রাব পরীক্ষা করে গর্ভাবস্থা বোঝা যায়৷
* যে সব মহিলার মাসিক অনিয়মিত বা অন্য কোনও সমস্যা থাকে তাদের আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় (নিয়মিত তারিখে মাসিক না হবার কমপক্ষে সপ্তাহ পর)

গর্ভাবস্থায় যে সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন-

পরিশ্রমগর্ভাবস্থায় একজন মহিলা কতোটা পরিশ্রম করবেন তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়৷ সাধারণভাবে বলা যায়, মা গর্ভাবস্থায় তার স্বাভাবিক সংসারের সব কাজই করবেন৷ তবে প্রথম তিন মাস এবং শেষের দু-এক মাস খুব ভারী বা পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো৷ যেমন- কাপড় কাঁচা, ভারী জিনিস তোলা, পানি আনা, ধান ভানা ইত্যাদি না করা৷ গর্ভাবস্থায় সিঁড়িতে ওঠা-নামার সময় যথেষ্ট সতর্ক থাকা উচিত৷
বিশ্রামগর্ভবতী মায়ের যেন ভালো ঘুম হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ গর্ভবতীকে দৈনিক নয় থেকে দশ ঘন ঘণ্টা ঘুমোতে হবে৷ দিনে দুঘণ্টা এবং রাতে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে৷ যদি কারো ঘুমের অসুবিধা থাকে, তা হলে তাকে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে, গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্রাম নিতে হবে৷ দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে অথবা বসে (/ ঘণ্টার বেশি) কাজ করা উচিত নয়৷
গোসলপ্রতিদিন ভালোভাবে গোসল করা উচিত৷ তবে পুকুরে সাঁতার কাটা বা পানিতে ঝাঁপ দেওয়া ঠিক নয়৷ গ্রীষ্মকালে শারীরিক পরিচ্ছন্নতা আরামের জন্য প্রয়োজন হলে একাধিকবার গোসলে করতে পারেন তবে ঠান্ডা যেন না লাগে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে৷
পোশাকগর্ভাবস্থায় যাতে পেটের ওপর চাপ কম পড়ে এবং চলাফেরায় আরাম পাওয়া যায় সেজন্য ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত৷ অন্তর্বাস প্রয়োজনানুপাতে ঢিলা থাকতে হবে৷ সময় সিনথেটিক ব্যবহার না করে সুতির পোশাক পরাই ভালো৷
জুতা : গর্ভাবস্থায় উঁচু হিলের জুতা ব্যবহার করা উচিত নয়৷ জুতা নরম এবং ঠিক মাপমতো হওয়া উচিত৷ জুতা পরে স্বাচ্ছন্দো চলাফেরা করতে যেন কোন রকম ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ এসময় শরীরের ওজন ক্রমশ বাড়তে থাকে৷ তাই ভারসাম্য রক্ষার জন্য নিচু অথবা মাঝারি ধরনের হিলওয়ালা জুতা পরাই ভাল৷
দাঁতের যত্ন : দাঁতের যত্ন মাস বয়স থেকে সারা জীবনই নিতে হয়। প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই সবার দাঁত ব্রাশ করা উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাশ করার কথা ভুললে চলবে না। গর্ভাবস্থায় দাঁতের যত্ন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি নিতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থার দুই মাস পর থেকে মুখ এবং দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়।
স্তনের যত্নগর্ভাবস্থায় গর্ভের প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত স্তনের বিশেষ যত্ন নেয়া উচিত৷ গর্ভাবস্থায় শরীরের স্বাভাবিক সব প্রক্রিয়ার একটি বিরাট পরিবর্তন ঘটে। যার প্রভাবে স্তনবৃন্ত বা নিপল আকারে বড়, সংবেদনশীল এবং গাঢ় রং ধারণ করে। নিপলের চারদিকের কালো অংশ অর্থাৎ এরিওলাও সময় তুলনামূলকভাবে বড় হয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় এরিওলার সেবাসিয়াস গ্রন্থিগুলো বেশি সক্রিয় হবার ফলে সেখানে ১৫/২০টি বড় বড় দানা দেখা যায়, যাকে ডাক্তারি ভাষায় মন্টগোমেরী' টিউবারকল বলে। পেটের ঠিক মাঝখানে একটি লম্বা বাদামী রংয়ের দাগও অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয়লিনিয়া নাইগ্রা' 'গর্ভাবস্থায় সন্তান প্রসবের দিন যতই ঘনিয়ে আসে মায়ের শরীরের ওজন ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে। সময় শরীরের বিশেষ বিশেষ কিছু অংশ (যেমন- স্তন, পেট ইত্যাদি) আকার আয়তনে তুলনামূলকভাবে অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়। ফলে সমস্ত স্থানের ত্বকের নিচের টিসুগুলোর পরিবর্তন হয়ে দ্রুত এবং বেশি সম্প্রসারণের কারণ ত্বকের দ্বিতীয় স্তর ডার্মিসে থাকা ইলাস্টিক ফাইবার ছিড়ে গিয়ে আড়াআড়ি ফাটা ফাঁকা চিকন সাদাটে বা গোলাপী রংয়ের দাগের সৃষ্টি করে। স্থানের ত্বক কিছুটা কুচকানো থাকে। ডাক্তারি ভাষায় ত্বকের পরিবর্তনকেস্টায়া' বলে। যেহেতু এটি গর্ভাবস্থায় হচ্ছে, সেহেতু এক্ষেত্রে এর নামস্ট্রায়া গ্রাভিডেরাম' বাপ্রেগনেন্সি স্ট্রেচ মার্ক' দেখা গেছে, তুলনামূলকভাবে এই দাগ ফর্সা, মোটা এবং প্রথম সন্তান প্রসবকারী মায়েদেরই বেশি চোখে পড়ে। সাধারণত এই দাগ হওয়া শুরু হয় গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাস থেকেই। তারপর গর্ভাবস্থায় সন্তান প্রসবের দিন যতই ঘনিয়ে আসে মায়ের শরীরের ওজন ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে, আর পরিবর্তনও বাড়তে থাকে। গর্ভাবস্থায় ত্বকের আরো অনেক ধরনের পরিবর্তন হয়ে থাকে। যেমন-গর্ভাবস্থার প্রথমদিকে কারো কারো চুলের বৃদ্ধি কিছুটা বেশি হতে পারে। তবে শেষ দিকে এবং প্রসবের পর পর চুল সাধারণত আরো বেশি পড়ে। শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাওয়ায় গরমের দিনে গর্ভবর্তী মায়েদের ফাংগাল ইনফেকশন এবং ঘামাচির উৎপাত বেশি হতে পারে। সে জন্য প্রয়োজনে ভালো উন্নতমানের ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে এবং সব সময় সুতী কাপড় ব্যবহার করতে হবে। ঘামে ভেজা কাপড় বেশিক্ষণ ব্যবহার না করে সময় কাপড় ঘন ঘন বদল করলেই ভালো। সাবান কুসুম গরম পানির সাহায্যে পরিষ্কার করে পরে ঠাণ্ডা পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলে শুকনো নরম তোয়ালে দিয়ে মোছা উচিত৷ তা ছাড়া স্তনের বোঁটা বা নিপল যাতে ফেটে না যায় এবং গঠন সুঠাম হয় সেজন্য গ্লিসারিন মাখতে পারেন অথাব বোঁটা সামনের দিকে একটু টেনে আঙুলে তেল (অলিভ ওয়েল হলে ভালো হয়) নিয়ে বুড়ো আঙুলের সাহায্যে আস্তে আস্তে ম্যাসেজ করতে পারেন৷ এতে পরে নবজাতকের স্তন্যপানের সুবিধা হয়৷
ত্বকের যত্নগর্ভাবস্থায় প্রতিদিন গোসলের পরে তলপেটে আস্তে আস্তে কুসুম গরম তেল মালিশ করা ভালো৷ তাহলে পেটের ত্বক সহজে প্রসারিত হবে এবং ত্বকে টান কম পড়ার কারণে সাদা সাদা দাগ কম হবে৷ ত্বকেও অনেক ধরনের পরিবর্তন এবং নানা ধরনের চর্মরোগ সৃষ্টি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় খাবারের চাহিদা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি থাকে, তাই সেই অনুপাতে খাওয়া-দাওয়া না করলে মায়ের ত্বকে হতে পারে বিশেষ কোনো খাদ্য উপাদানের ঘাটতিজনিত রোগ অর্থাৎ অপুষ্টিজনিত কারণেও সময় বিভিন্ন চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায়ও সময় পরিবর্তন হয়। ফলে বিভিন্ন জীবাণু (যেমন-ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস ইত্যাদি) সংক্রমণের দ্বারাও ত্বকে অনেক চর্মরোগ হতে পারে। এছাড়া বেশকিছু চর্মরোগ সময় হয়ে থাকে, যার প্রকৃত কারণ এখনো অজানা। আর ধরনের কিছু নির্দিষ্ট চর্মরোগ রয়েছে, যা কেবল গর্ভাবস্থায়ই হয় এবং সরাসরি গর্ভাবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট। যেমন-প্রুরাইগো জেসটাসোনিস, পেমপিগোয়েড জেসটাসোনিস, ইমপিটিগো হারপিটিফরমিস ইত্যাদি চর্মরোগ। উল্লেখ্য যে, গর্ভাবস্থার আগে থেকেই যদি কারো কোনো চর্মরোগ থেকে থাকে, গর্ভাবস্থায় তার অবস্থা বিভিন্নজনের বেলায় বিভিন্ন রকম হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে কোনো কোনো চর্মরোগ গর্ভাবস্থায় আরো বেড়ে যায়, আবার কারো বেলায় উল্টো অর্থাৎ কমে যায়। হরমোনসহ শরীরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উপাদানের তারতম্যের কারণেও অনেক উপসর্গ সময় দেখা দিতে পারে। ত্বক কালো হয়ে যাওয়া এবং চুলকানি এর মধ্যে অন্যতম। গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টরণ মেলানোসাইট স্টিমুলেটিং হরমোনের পরিমাণ শরীরে বেড়ে যায়। ফলে ত্বকে কালো কালো ছোপ এবং মুখে মেছতাসহ বেশ কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে। স্তন, যৌনাঙ্গ এবং অন্যান্য কিছু অঙ্গ সময় অতিরিক্ত কালো হয়ে যেতে পারে।
চাকরিগর্ভবতী মা চাকরিজীবী মহিলা হলে, কী ধরনের কাজ এবং কতদিন ওই কাজ আপনি করতে পারবেন তা নিয়ে আপনার চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ করুন৷ আপনার স্বাস্থ্য গর্ভকালীন আপনার শরীরের অবস্থার ওপর কাজ করা বা না করা নির্ভর করবে৷
ব্যায়াম : শরীর সুস্থ রাখা এবং সহজ প্রসবের জন্য গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করা একান্ত প্রয়োজন৷ প্রত্যহ সকল-সন্ধায় এক ঘণ্টা করে হাঁটলে ঠিকমতো রক্ত চলাচলে সহায়তা করে এবং পেশিগুলোও সুস্থ সবল অবস্থায় থাকে৷ব্যায়াম কতোটা শ্রমসাধ্য হওয়া উচিত সে বিষয়ে কিছু সাধারণ জ্ঞান সকলেরই থাক ভালো৷ যাদের আসবাবপত্র পরিষ্কার বা রান্না ধরণের কাজ করতে হয় তাদের আলাদাভাবে ব্যায়ামের প্রয়োজন হয় না৷যারা কর্মজীবী তারা চাকরি থেকে ছুটি না নিলে পৃথকভাবে ব্যায়ামের প্রয়োজন হয় না৷ তবে গর্ভাবস্থায় শেষ দিকে কাজ কমে গেলে দুবেলা কিছুক্ষণ হাঁটা উচিত৷ যাদের অফিসে সারাক্ষণ বসে কাজ করতে হয় তাদের অনেকক্ষণ বসে থাকার জন্য দিনের শেষে ক্লান্তি আসে৷ অবস্থায় এক সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বসে না থেকে কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে একটু বিশ্রাম নেয়া ভালো৷ সাধারণ ব্যায়ামের মধ্যে সমান রাস্তায় বা জমিতে হাঁটা খুবই উপকারী৷ তবে হাঁটার দূরত্ব এমনভাবে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত যাতে অহেতুক ক্লান্তি না আসে৷
সহবাস সাধারণভাবে বলা যায়, গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস সহবাস থেকে বিরত থাকাই ভালো৷ দ্বিতীয় তিনমাসে দম্পতির ইচ্ছেমতো সহবাস করা যায়৷ তবে তাও নির্ভর করে গর্ভবতীর শারীরিক অবস্থার ওপর৷ প্রয়োজনে নিয়মিত চেকআপকারী ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ভালো৷ শেষ তিন মাস গর্ভবতীর শারীরিক অবস্থার জন্য সহবাসে অসুবিধা হতে পারে৷ তা ছাড়া সহবাসের ফলে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে৷ তাই শেষ তিন মাসও সহবাস না করাই ভালো৷
মানসিক শান্তিগর্ভাবস্থায় সব সময় মন ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে৷ অনেকের ধারণা সময় সত্ চিন্তা করলে সন্তান সৎ চিন্তার অধিকারী হয়৷ তবে এটা ঠিক গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মানসিক দুশ্চিন্তা, রাগ, ভয় বা শোকের ফল গর্ভবতী মায়ের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে৷মনকে প্রফুল্ল রাখার জন্য হালকা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারেন, ভালো ভালো কথা শুনবেন, বলবেন, এমন কোন অনুষ্ঠান দেখবেন না বা কোন আচরণে পরবেন না যাতে আপনি মনে আঘাত পান ,এমন কোন মুভিও দেখবেন না যাতে আপনি ভয়পান ,অথবা কষ্ট পান ,এসব সন্তানের উপর প্রভাব ফেলে এসময় স্বামী যদি সহযোগিতা করেন তবে গর্ভবতী নারীর সময়গুলো আরও ভালো যাবে ,পরিবারের বাকি সদস্যদেরও তার মনের দিকগুলো খেয়াল করা উচিৎ এমন কোন আচরন করা উচিৎ নয় যাতে মা কষ্ট পান জোরে ,উচ্চস্বরে কথা বলা ,ঝগড়া বা শব্দ দূষণেও মনের শরীরের উপর প্রভাব পড়তে পারে ,তাই এই ব্যাপারগুলি এড়িয়ে চলা উচিৎ
ভ্রমণবর্তমানে অনেক মহিলাই কর্মজীবী৷ কর্মজীবী মহিলাদের একেবারে ঘরে বসে থাকা চলে না৷ কাজের জন্য বাইরে যেতেই হয়৷ তবে ভ্রমণ বলতে আমরা বুঝি দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া৷ দূরে কোথাও বেড়াতে হলে সাবধানে যাতায়াত করতে হবে৷ যে ভ্রমণে বেশি ঝাকুনি লাগে (যেমন খারাপ রাস্তায় রিকশা, স্কুটার বা বাসে চলা) বেশি পরিশ্রম বোধ হয়, তা না করাই ভালো৷ লম্বা, ক্লান্তিকর ভ্রমণ (প্রথম মাস এবং শেষ দেড় মাস) এড়িয়ে চলুন৷ একান্ত যদি ভ্রমণ করতে হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত৷
গর্ভাবস্থায় ওষুধএকজন নারী যখন গর্ভবতী হন, তখন তার দেহমনে বিরাট একটা পরিবর্তন সূচিত হয়। কারণ, তার ভেতরে বেড়ে উঠছে অনাগত একটি জীবন। তাই গর্ভবতী নারীকে সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। কারণ, সামান্য অসতর্কতার ফলে তাঁর কিংবা শিশুটির অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকা উচিত ওষুধ সেবনে। বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে কোনো ওষুধই পারতপক্ষে খাওয়া উচিত নয়। এমনকি ভিটামিন বা আয়রনও নয়।

এড়িয়ে চলবেন যেগুলো-
তেজস্ক্রিয়তা : গর্ভস্থ শিশু বিভিন্নভাবে তেজস্ক্রিয় রশ্মির সংস্পর্শে আসতে পারে। গর্ভবতী মা অনেক সময় চিকিৎসাগত কারণে তেজস্ক্রিয় পদার্থযুক্ত ওষুধ খেয়ে থাকেন, যা মায়ের মূত্রাশয়ের দেয়ালে অনেক দিন জমা থাকে এবং মূত্রাশয়ের পেছনে অবস্থিত জরায়ু ভ্রূণের ওপর তেজস্ক্রিয় রশ্মি ছড়িয়ে দিতে পারে। সারা বিশ্বেই মানুষ প্রতিনিয়ত অল্পমাত্রায় তেজস্ক্রিয় রশ্মির সম্মুখীন হচ্ছে। একে বলা হয় প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা। এর উৎস হচ্ছে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ, বিভিন্ন মহাজাগতিক রশ্মি, যা বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে চলে আসে।প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা ছাড়াও একজন গর্ভবতী মা তেজস্ক্রিয় রশ্মি বা পদার্থের সম্মুখীন হতে পারে-এক্স-রে, সিটিস্ক্যান, ফ্লুরোস্কোপি (বিশেষ ধরনের এক্স-রে) পরীক্ষা করালে, ক্যানসার চিকিৎসার জন্য রেডিওথেরাপি গ্রহণ করলে কিংবা তেজস্ক্রিয় পদার্থযুক্ত ওষুধ গ্রহণ করলে।
গর্ভবতী অবস্থায় বিমান ভ্রমণদূরপাল্লার বিমানগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচু দিয়ে যাতায়াত করে। ভূপৃষ্ঠ থেকে যত ওপরে যাওয়া যায় ততই প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। অল্প সময়ের জন্য অনিয়মিত বিমান ভ্রমণে গর্ভবতী মা বা ভ্রূণের ক্ষতির আশঙ্কা বেশ কম। তবে যারা ঘন ঘন দূরপাল্লার বিমানে ভ্রমণ করে থাকেন, তাদের নিজেদের ওপর তেজস্ক্রিয়তার মাত্রার হিসাব রাখা প্রয়োজন 
Google+ Pinterest

0 Response to " গর্ভাবস্থায় নারীর সুস্থতা ও সঠিক পরিচর্যা "

  • Commented politely and wisely in accordance with the content.
  • Comments are not needed by other readers [spam] will be removed immediately.
  • If the article entitled " গর্ভাবস্থায় নারীর সুস্থতা ও সঠিক পরিচর্যা " is useful, share to social networks.
Code Conversion