বিয়ে ভীতির শতকরা ৯৯ ভাগই মানসিক। সামান্য কাউন্সিলিং এবং দু’একটি মামুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পুরুষের বিয়ে ভীতি দূর করা যায়। কিন্তু আমাদের আজকের বিষয় বিয়ে ভীতি নয়। যাদের একেবারেই বিয়ে করা উচিত নয় তার সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়া।
দীর্ঘদিন ধরে পুরুষের সমস্যা নিয়ে লিখছি। আমাদের এই লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে নারী-পুরুষের প্রাইভেট লাইফ তথা
যৌনজীবন নিয়ে একটা বিজ্ঞানসম্মত ধারণা দেয়া যাতে তরুণরা নানা ধরনের বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা পান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, এক শ্রেণীর তরুণ যুবক বা অবিবাহিত পুরুষ মনে করেন তারা শরীরের ওপর নানা অত্যাচার করার কারণে নিঃশেষ হয়ে গেছেন। বিয়ে, ঘর-সংসার এসব তাদের আর হবে না। বিয়ে ভীতির কারণে অনেকে ৩০, ৩৫ বা ৪০ পেরিয়ে চার হাত এক করতে সাহস পাননি। যদিও বিয়ে ভীতির শতকরা ৯৯ ভাগই মানসিক। সামান্য কাউন্সিলিং এবং দু’একটি মামুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পুরুষের বিয়ে ভীতি দূর করা যায়। কিন্তু আমাদের আজকের বিষয় বিয়ে ভীতি নয়। যাদের একেবারেই বিয়ে করা উচিত নয় তার সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়া।
একটা উদাহরণ দিয়েই লেখা শুরু করতে চাই। আমি দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি যৌন বিজ্ঞান বিশ্বব্যাপী একটি স্বীকৃত বিষয় এবং একমাত্র সেক্সোলজিস্ট, ইউরোলজিস্ট ও ক্ষেত্র বিশেষ মানসিক বিশেষজ্ঞগণের কাছে যৌন সমস্যার রোগীরা যান। এমনকি অনেক ডার্মাটোলজিস্টও যৌন সমস্যার রোগী দেখেন। যদিও সেক্সোলজির ওপর প্রশিক্ষণ নেই এমন কারো যৌন সমস্যার রোগীর চিকিৎসা না করাই ভালো। আমার চেম্বারে সাধারণত পুরাতন রোগী কম থাকে। কারণ আমি সমস্যার ধরন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কোনকিছু সনাক্ত না হলে সামান্য কাউন্সিলিং করেই দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে বলি। যাদের সমস্যা নেই তাদের বিয়ের পরামর্শ দেই। অথবা যারা বিয়ে করেছেন তাদের মনের জোর বাড়ানোর জন্য কাউন্সিলিং করি। এমনকি স্বামী-স্ত্রীকে একসঙ্গে অথবা আলাদাভাবে কাউন্সিলিং করি। সবক্ষেত্রে সফল হয়েছি বলবো না, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যায়। বলছিলাম দু’একটা উদাহরণ দেবো।
এক
সুদর্শন যুবক। বয়স ২৫/২৬ এর বেশি হবে না। মা-এর সঙ্গে এসেছেন যুবক। প্রথমে মা আমার চেম্বারে ঢুকে ছেলে
সম্পর্কে কিছুটা ব্রিফিং করলেন। অভিযোগ বিয়ের ১৫ দিনের মধ্যে ছেলের বউ সংসার ছেড়ে চলে গেছে। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছেন। সর্বশেষ আমার চেম্বারে এসেছেন, জানালেন। পূর্বের পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখে বললাম, আপনার ছেলের স্বাভাবিক যৌন জীবন সম্ভব নয়। আপনার পুত্রবধূ শিক্ষিত। তাই হয়ত ঝুঁকি নিতে চাননি। পূর্ব পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যুবকের ‘ ভেনো অকুলসিভ ফেইলিউর’ ধরা পড়েছে। অর্থাৎ এ ধরনের সমস্যায় স্ত্রীর সান্নিধ্যে সামান্য সময় থাকা যায়, যা কাম্য নয়। আমি যুবকের মাকে বললাম, আপনার ছেলের ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব নয়। একমাত্র ‘পেনাইল প্রস্থেসিস’-এর মাধ্যমে বিকল্পভাবে সংসার টিকিয়ে রাখা যায়, যদি স্ত্রীর আপত্তি না থাকে। পেনাইল প্রস্থেসিস এক ধরনের অপারেশনের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা হয়। দেশের একজন স্বনামধন্য ইউরোলজিস্ট অপারেশন করেন। অপারেশনসহ মোট ব্যয় হয় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। যুবকটির মাকে বললাম, ছেলেকে এই অবস্থায় আর দ্বিতীয় বিয়ের জন্য প্র‘তি নিতে বলবেন না। ইউরোলজিস্ট-এর ঠিকানা দিয়ে পরে জানাতে বললাম। তবে যাদের বিকল্প ব্যবস্থা বা ‘পেনাইল প্রস্থেসিস’ করা প্রয়োজন তাদের ক্ষেত্রে পাত্রীপক্ষকে এ বিষয়টি অবহিত করা প্রয়োজন। পাত্রীপক্ষকে এ ধরনের সমস্যা অবহিত না করে কোনভাবেই বিয়ে করা উচিত নয়।
দুই
আমার এক বন্ধুর নিকট আত্মীয়কে নিয়ে আসলেন। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যার কারণে দেশের একাধিক মানসিক চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসা নিয়েছেন। একজন মানসিক ডাক্তার বলেছেন, ছেলেকে বিয়ে দিয়ে দিন। বউ পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। সর্বশেষ আমার চেম্বারে নিয়ে আসলেন। আমি পূর্বের রিপোর্ট পর্যালোচনা এবং কিছু নতুন রিপোর্ট করালাম, রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগীর আত্মীয়কে বললাম এই মুহূর্তে বিয়ে দেয়া সঠিক হবে না। যাহোক, আমার বন্ধুর নিকট আত্মীয় তাই আর বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করলাম না। রোগীর ইতিহাস এবং শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মনে হয়েছে তার স্বাভাবিক যৌন জীবন সম্ভব নয়। কারণ দীর্ঘদিন মানসিক রোগের চিকিৎসার ব্যবহ্নত ওষুধ, এন্টি ডিপ্রেসিভ ওষুধসহ বেশকিছু ওষুধ আছে যা পুরুষের যৌনশক্তি নষ্ট করে দেয়। যাহোক, কিছুদিন পর বন্ধুর আত্মীয়টি আসলেন। বললেন, বিয়ে করেছি। এখন সমস্যা হচ্ছে। আমি আর কথা না বাড়িয়ে কিছু সেক্স মেডিসিন দিয়ে বললাম এগুলো নিয়মিত সেবন করে দেখুন লাভ হয় কিনা। দিন পনেরো পরে নববিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে আসলেন চেম্বারে। নববধূর সঙ্গে আলাপ করে বুঝলাম আমি যে ধরনের ধারণা করেছিলাম তাই হয়েছে। একরাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে নববধূটি চলে গেলো। আর কখনো আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
তিন
বিয়ে করেছে প্রায় সাত বছর। কোন সন্তান হচ্ছে না। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। কোন চিকিৎসকই সঠিক কোন মন্তব্য করেননি। আমি বিভিন্ন জায়গায় প্যাথলজিক্যাল রিপোর্টের তারতম্য দেখে আর্মড ফোর্সেস প্যাথলজিতে পাঠাই। রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা গেলো যুবকটি এ্যাজোসপারমিয়া অর্থাৎ বাবা হতে পারবেন না। এ ধরনের সমস্যা ধরা পড়লে আমি রোগীকে বিষয়টি অবহিত করি। যাতে এ নিয়ে আর দীর্ঘদিন অপচিকিৎসার শিকার না হন। আর রোগী অবিবাহিত হলে বিয়ের আগে সমস্যাটা পাত্রীপক্ষকে না বলে বিয়ে না করার পরামর্শ দেই। উপরের তিনটি উদাহরণ থেকে বোঝা উচিত কোন সব ক্ষেত্রে পুরুষদের বিয়ে না করা উচিত। এছাড়া ঘাতক ব্যাধি এইডস, স্থায়ী যৌন সমস্যা (ইমপোটেন্স) ইত্যাদির ক্ষেত্রেও পুরুষদের বিয়ে করা উচিত নয়। মনে রাখতে হবে শুধু মাত্র সেক্স মেডিসিনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন স্ত্রীর কাছে নিজের সামর্থ দেখানো যায় না। একদিন না একদিন স্ত্রী সব বুঝতে পারেন। তাই কোন ধরনের সমস্যা হলে প্রথমে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিষয়টি স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করুন। নিশ্চয়ই আপনার স্ত্রী বিষয়টি সহজভাবে নেবেন এবং আপনাকে সহযোগিতা করবেন। এছাড়া যে সমস্ত ক্ষেত্রে বিয়ে করা উচিত নয় সেসব সমস্যা থাকলে বিয়ে থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।
——————————-
ডাঃ মোড়ল নজরুল ইসলাম
চুলপড়া, যৌন সমস্যা ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ
এবং লেজার এন্ড কসমেটিক্স সার্জন
বাংলাদেশ লেজার স্কিন সেন্টার
বাড়ী নং-২২/এ, রোড-২, ধানমন্ডি, ঢাকা।
দৈনিক ইত্তেফাক, ০৩ মে ২০০৮
1 Response to " কখন বিয়ে করা উচিত নয় "
Very helpful website i have also same article my web site: https://techonlinebd.com
Reply